গাউসের সূত্র পদার্থবিজ্ঞানের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র। এটি স্থির তড়িতের একটি মৌলিক সূত্র। ম্যাক্সওয়েল যে চারটি সূত্রের সাহায্যে তার তড়িৎ চৌম্বক তত্ত্ব বর্ণনা করেন, তার মধ্যে গাউসের সূত্রটি হচ্ছে প্রথম সূত্র। গাউসের সূত্র থেকে আমরা কুলম্বের সূত্রে উপনীত হতে পারি। গাউসের সূত্রে তড়িৎ ফ্লাক্স নামক রাশিটি একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে । তাই আমরা গাউসের সূত্র বিবৃত করার আগে তড়িৎ ফ্লাক্স সম্পর্কে কিছুটা ধারণা গ্রহণ করবো।
তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যে কোনো তল কল্পনা করলে তার সাথে তড়িৎ ফ্লাক্স সংশ্লিষ্ট থাকে বা ঐ তল দিয়ে তড়িৎ ফ্লাক্স অতিক্রম করে বা প্রবাহিত হয়। কোনো তলের ক্ষেত্রফলের সাথে ঐ তলের লম্ব বরাবর তড়িৎ ক্ষেত্রের তথা তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্যের উপাংশ গুণ করলে তড়িৎ ফ্লাক্স পাওয়া যায়।
কোনো তলের ক্ষেত্রফল S এবং ঐ তলের লম্ব বরাবর তড়িৎ ক্ষেত্র E হলে [চিত্র ২.২২ক] তড়িৎ ফ্লাক্স
কিন্তু যদি তড়িৎ ক্ষেত্র তলের লম্ব বরাবর ক্রিয়া না করে লম্বের সাথে <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>θ</mi></math> কোণে ক্রিয়া করে (চিত্র ২.২২খ] তাহলে ঐ তলের লম্ব বরাবর তড়িৎ ক্ষেত্রের উপাংশ হবে E cos <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>θ</mi></math>। সুতরাং তড়িৎ ফ্লাক্স হবে
cos<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>θ</mi></math> .. (2.39)
এখন <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mover accent='true'><mi>S</mi><mo>→</mo></mover></math> কে একটি ভেক্টর হিসেবে গণ্য করা হয় যার মান S ঐ তলের ক্ষেত্রফল নির্দেশ করে এবং দিক হয় ঐ তলের লম্ব বরাবর বহির্মুখী ।
সুতরাং উপরিউক্ত সমীকরণের <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>θ</mi></math> হলো ক্ষেত্রফল ভেক্টর <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mover accent='true'><mi>S</mi><mo>→</mo></mover></math> এবং তড়িৎ ক্ষেত্র <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mover accent='true'><mi>E</mi><mo>→</mo></mover></math> এর অন্তর্ভুক্ত কোণ। অতএব, এই সমীকরণ দাঁড়ায়,
সুতরাং ক্ষেত্রফল ভেক্টর ও তড়িৎ ক্ষেত্র এর স্কেলার গুণফল দ্বারা তড়িৎ ফ্লাক্স পরিমাপ করা হয়।
কোনো তড়িৎ ক্ষেত্র <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mover accent='true'><mi>E</mi><mo>→</mo></mover></math> তে একটি অতি ক্ষুদ্র তল <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mover accent='true'><mi>dS</mi><mo>→</mo></mover></math> বিবেচনা করা যাক (চিত্র ২.২৩)। তাহলে ঐ তলের সাথে সংশ্লিষ্ট তড়িৎ ফ্লাক্স হবে,
.. (2.41)
সমগ্র ক্ষেত্রফলব্যাপী তড়িৎ ফ্লাক্স হবে,
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><msub><mo>∫</mo><mi>s</mi></msub><mover accent='true'><mi>E</mi><mo>→</mo></mover><mo>.</mo><mover accent='true'><mrow><mi>d</mi><mi>S</mi></mrow><mo>→</mo></mover></math> .. (2.42)
এই ক্ষেত্রফল তথা তলের ভেক্টর সর্বদা তলের সাথে লম্ব বরাবর। কোনো বদ্ধ তলের জন্য ঐ ক্ষেত্রের ফ্লাক্স হবে,
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><msub><mo>∮</mo><mi>s</mi></msub><mover accent='true'><mi>E</mi><mo>→</mo></mover><mo>.</mo><mover accent='true'><mrow><mi>d</mi><mi>S</mi></mrow><mo>→</mo></mover></math>.. (2.43)
এই তল যোগজ নির্দেশ করে যে সমগ্র তলকে অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সমতল <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mover accent='true'><mrow><mi>d</mi><mi>S</mi></mrow><mo>→</mo></mover></math> এ বিভক্ত করে প্রতিটি তল উপাদানের জন্য <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mover accent='true'><mi>E</mi><mo>→</mo></mover></math>. <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mover accent='true'><mrow><mi>d</mi><mi>S</mi></mrow><mo>→</mo></mover></math> স্কেলার রাশিটির হিসাব করতে হবে। এসব মানের সমষ্টিই হচ্ছে সমগ্র তলের মোট তড়িৎ ফ্লাক্স ।
রাশি ও একক : উপরিউক্ত (2.40) সমীকরণ বা অন্যান্য সমীকরণ থেকে দেখা যায়, তড়িৎ ফ্লাক্স একটি স্কেলার রাশি। আরো দেখা যায় যে, এর একক হচ্ছে NC-1 m2 ।
প্রখ্যাত গণিতবিদ কার্ল এফ গাউস এই সূত্র প্রদান করেন।
যদি কোনো বন্ধ তলের ক্ষেত্রফল S এবং ঐ তল কর্তৃক আবদ্ধ মোট আধান q হয়, তাহলে গাউসের সূত্রানুসারে,
.. (2.44)
বা, <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><msub><mo>∈</mo><mn>0</mn></msub><msub><mo>∮</mo><mi>s</mi></msub><mover accent='true'><mi>E</mi><mo>→</mo></mover><mo>.</mo><mover accent='true'><mrow><mi>d</mi><mi>S</mi></mrow><mo>→</mo></mover><mo>=</mo><mi>q</mi></math>.. (2.45)
এখানে হচ্ছে শূন্যস্থানের ভেদনযোগ্যতা।
স্পষ্টত: যদি ঐ তলে (গাউসীয় তল) কোনো আধান আবদ্ধ না থাকে বা তাতে সমপরিমাণ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধান থাকে অর্থাৎ q = 0 হয় তাহলে,
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><msub><mo>∮</mo><mi>s</mi></msub><mover accent='true'><mi>E</mi><mo>→</mo></mover><mo>.</mo><mover accent='true'><mrow><mi>d</mi><mi>S</mi></mrow><mo>→</mo></mover></math> =0
(2.45) সমীকরণ থেকে আমরা গাউসের সূত্রকে এভাবেও বিবৃত করতে পারি
আমরা জানি, কুলম্বের সূত্র দুটি বিন্দু আধানের মধ্যকার বলের জন্য প্রযোজ্য হয়। ধরা যাক, A বিন্দুতে [চিত্র ২.২৪] একটি বিচ্ছিন্ন বিন্দু আধান q অবস্থিত। এই আধান তার চারপাশে একটি তড়িৎ ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। এই তড়িৎ ক্ষেত্রে q থেকে দূরত্বে B বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে সেটি কুলম্বের সূত্র [সমীকরণ: 2.21 অনুসারে যে বল লাভ করে, তাই হচ্ছে ঐ বিন্দুর তড়িৎ প্রাবল্য E।
:-
এর দিক হবে AB রেখা বরাবর B বিন্দু থেকে বহির্মুখী। এখন q কে কেন্দ্র করে r ব্যাসার্ধের একটি গোলক কল্পনা করা যাক। সুতরাং এই গোলকের পৃষ্ঠে সর্বত্র তড়িৎ ক্ষেত্র এর তথা তড়িৎ প্রাবল্যের মান সমান হবে। গোলকের পৃষ্ঠের প্রতিটি বিন্দুতে এর দিক হবে ঐ বিন্দুতে অভিলম্ব বরাবর তথা ব্যাসার্ধ বরাবর বহির্মুখী।
এখন B বিন্দুতে গোলকের অতি ক্ষুদ্র একটি তল বিবেচনা করা যাক। এর মান হচ্ছে ঐ তলের ক্ষেত্রফল এবং দিক হচ্ছে ঐ তলের লম্ব বরাবর বহির্মুখী অর্থাৎ বরাবর। সুতরাং গোলকের পৃষ্ঠের প্রতিটি বিন্দুতে এবং এর দিক একই অর্থাৎ এবং এর মধ্যবর্তী কোণ = 0° । এই তলের সাথে সংশ্লিষ্ট তড়িৎ ফ্লাক্স হবে,
.
এই তল যোগজ নির্দেশ করে সমগ্র তলকে অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সমতল ' এ বিভক্ত করে প্রতিটি তল উপাদানের জন্য . ’ স্কেলার রাশিটির হিসাব করতে হবে। এসব মানের সমষ্টিই হচ্ছে সমগ্র তলের মোট তড়িৎ ফ্লাক্স ।
একটি বিচ্ছিন্ন বিন্দু আধান q বিবেচনা করা যাক। q কে কেন্দ্র করে r ব্যাসার্ধের একটি গোলক কল্পনা করা যাক, যার পৃষ্ঠ গাউসীয় তল হিসেবে গণ্য হবে। প্রতিসাম্য থেকে এটি সহজেই বোঝা যায় যে, এই গোলকের পৃষ্ঠে সর্বত্র তড়িৎ ক্ষেত্র এর তথা তড়িৎ প্রাবল্যের মান সমান হবে। গোলকের পৃষ্ঠের প্রতিটি বিন্দুতে এর দিক হবে ঐ বিন্দুতে অভিলম্ব বরাবর তথা ব্যাসার্ধ বরাবর বহির্মুখী (চিত্র ২.২২)।
গাউসের সূত্র প্রয়োগ করে আমরা পাই,
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><msub><mo>∈</mo><mn>0</mn></msub><msub><mo>∮</mo><mi>s</mi></msub><mover accent='true'><mi>E</mi><mo>→</mo></mover><mo>.</mo><mi>d</mi><mover accent='true'><mi>S</mi><mo>→</mo></mover><mo>=</mo><mi>q</mi></math>.. (2.46)
যেহেতু <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mover accent='true'><mi>E</mi><mo>→</mo></mover></math> এবং <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>d</mi><mover accent='true'><mi>S</mi><mo>→</mo></mover></math> এর অভিমুখ একই, তাদের অন্তর্ভুক্ত কোণ 0°
:- <math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><msub><mo>∮</mo><mi>s</mi></msub><mover accent='true'><mi>E</mi><mo>→</mo></mover><mo>.</mo><mi>d</mi><mover accent='true'><mi>S</mi><mo>→</mo></mover><mo>=</mo><msub><mo>∮</mo><mi>s</mi></msub><mi>E</mi><mi>d</mi><mi>s</mi><mo> </mo><mi>c</mi><mi>o</mi><mi>s</mi><mn>0</mn><mo>°</mo><mo>=</mo><mi>E</mi><msub><mo>∮</mo><mi>s</mi></msub><mi>d</mi><mi>s</mi><mo>=</mo><mi>E</mi><mo>×</mo><mn>4</mn><mi>π</mi><msup><mi>r</mi><mn>2</mn></msup></math>
সুতরাং (2.46) সমীকরণ দাঁড়ায়,
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><msub><mo>∈</mo><mn>0</mn></msub><mi>E</mi><mo mathvariant="italic"> </mo><mn>4</mn><mi>π</mi><msup><mi>r</mi><mn>2</mn></msup><mo>=</mo><mi>q</mi><mspace linebreak="newline"/><mi mathvariant="normal">E</mi><mo>=</mo><mfrac><mn>1</mn><mrow><mn>4</mn><mi>π</mi><msub><mo>∈</mo><mn>0</mn></msub></mrow></mfrac><mfrac><mi mathvariant="normal">q</mi><mrow><msup><mi>r</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac><mspace linebreak="newline"/></math>.. (2.47)
মনে করি, যে বিন্দুতে E হিসাব করা হয়েছে, সেই বিন্দুতে একটি আধান qo স্থাপন করা হলো। তাহলে qo এর ওপর প্রযুক্ত বলের মান
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi mathvariant="normal">F</mi><mo>=</mo><msub><mi mathvariant="normal">q</mi><mi mathvariant="normal">ο</mi></msub><mi mathvariant="normal">E</mi><mspace linebreak="newline"/><mi mathvariant="normal">F</mi><mo>=</mo><mfrac><mn>1</mn><mrow><mn>4</mn><mi>π</mi><msub><mo>∈</mo><mn>0</mn></msub></mrow></mfrac><mfrac><mrow><msub><mi mathvariant="normal">qq</mi><mi mathvariant="normal">ο</mi></msub></mrow><mrow><msup><mi>r</mi><mn>2</mn></msup></mrow></mfrac><mspace linebreak="newline"/></math>
অর্থাৎ নির্দিষ্ট মাধ্যমে দুটি বিন্দু আধানের মধ্যকার ক্রিয়াশীল বলের মান আধানদ্বয়ের গুণফলের সমানুপাতিক এবং তাদের মধ্যকার দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। আর এটিই হচ্ছে দুটি বিন্দু আধানের মধ্যকার কুলম্বের সূত্র।
সুতরাং বলা যেতে পারে, গাউসের সূত্রের একটি বিশেষ রূপ হচ্ছে কুলম্বের সূত্র। অন্য কথায়, কুলম্বের সূত্রের সাধারণীকৃত রূপ হচ্ছে গাউসের সূত্র।
দুটি বিন্দু আধানের মধ্যকার আকর্ষণ বিকর্ষণ বল সংক্রান্ত সূত্রটি হচ্ছে কুলম্বের সূত্র। সুতরাং কুলম্বের সূত্রের বল, প্রাবল্য, বিভব ইত্যাদি হিসাব করতে হলে তড়িৎ ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানটি বিন্দু আধান হতে হবে। একটি বিস্তৃত আহিত বস্তুর বা আধানের কোনো বণ্টনের ক্ষেত্রে কুলম্বের সূত্র ব্যবহার করা অসুবিধাজনক। আধানের বণ্টন যদি সুষম না হয়, তাহলে স্থির তড়িৎ সংক্রান্ত হিসাব নিকাশ খুবই কষ্ট ও সময়সাধ্য হয়ে ওঠে। অপরদিকে গাউসের সূত্র আধানের যে কোনো বণ্টনের বা আহিত বস্তুর যে কোনো আকৃতির ক্ষেত্রে সহজেই ব্যবহার করে ঈন্সিত হিসাব নিকাশ করা যায়।